চাঁদপুরের চরাঞ্চলের প্রতিটি বাড়িই সবজির বাগান পেয়েছেন শফলতা

চাঁদপুরের চরাঞ্চলের প্রতিটি বাড়িই সবজির বাগান পেয়েছেন শফলতা

মোঃ রাসেল দেওয়ান চাঁদপুর প্রতিনিধি

এবছরের অন্যান্য সময়ের চাইতে শীত মৌসুমে সবজির আবাদ বেশী হয়। চরাঞ্চলও সেই প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই। নদীর ভাঙা গড়ার খেলায় এক চর থেকে অন্য চরে ঘর-বাড়ি তৈরী করে চরাঞ্চলের লোকজন। নতুন করে স্বপ্ন দেখেন যেখানে তাদের বাড়ী হয়। সেখানেই গড়ে তুলেন সবজির বাগান। একই সাথে গবাদি পশু ও অন্যান কৃষি উৎপাদন করেন। বর্তমানে চরাঞ্চলের উৎপাদিত সবজি দিয়ে শহর অঞ্চলের সবজির একটি অংশ চাহিদা মিটে। চাঁদপুর সদর উপজেলার মেঘনা নদীর পশ্চিমে চরগুলোর ছোট বাড়ি গুলো দেখে মেন হয় প্রতিটি বাড়িই যেন সবজির বাগান।

সম্প্রতি সময়ে চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের বলাশিয়া, শিলার চর, চিরারচর, বাঁশগাড়ি ও ল¹িমারার চরে গিয়ে দেখাগেছে পদ্মা-মেঘনা নদীর ভাঙনের শিকার চরাঞ্চলের লোকদের নতুন নতুন বাড়ী তৈরী হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে অধিকাংশ বাড়ীর চারদিকে পানি থৈ থৈ করে। কিন্তু শীত মৌসুমে পানি শুকিয়ে গেলে জমিতে সরিষা, মাশকালাইসহ অন্যান্য শীতকালীন সবজির আবাদ। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও বসে নেই। প্রতিটি বাড়ী নারীদের হাতের ছোঁয়ায় সব্জির বাগানে পরিণত হয়েছে।

বলাশিয়া চরের রোকেয়া বেগম বলেন, পদ্মার ভাঙনের শিকার হয়েছি বহুবার। তারপরেও আবার সন্তানদের নিয়ে মাথা গোজার ঠাঁই করেছি। গত ১ বছর আগে এখানে বাড়ি তৈরী করা হয়েছে। বাড়িতে শিম, কুমড়া, কদু, পেঁপে, বেগুন গাছ আছে। এগুলো আমাদের পরিবারের চাহিদা মিটে এবং বাজারেও বিক্রি করি। এখানকার সবগুলো বাড়িতেই এধরণের সবজির বাগান আছে।

একই এলাকার রোকসানা আক্তার বলেন, আমাদের বাড়ীতে সবজির বাগান করতে বাজার থেকে সার কিনতে হয় না। আমাদের পালিত গবাদি পশুর জৈব সার দিয়ে সবজির বাগান হয়। অনেক সময় গোয়াল ঘর ও বসত ঘরের উপরেই শিম, কুমড়া ও লাউ গাছ লাগানো হয়। কারণ আমরা চরাঞ্চলে স্থায়ী না হওয়ার কারণে বাড়ীতে বড় ধরণের কোন গাছ নেই।

ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাসান আলী দেওয়ান বলেন, চরাঞ্চলের উৎপাদিত সবজি ও দুধ প্রতিদিন ট্রলারে করে পদ্মা-মেঘনা পাড়ি দিয়ে চাঁদপুর শহরে চলে যায়। শহরের চরাঞ্চলের সবজির চাহিদা বেশী। প্রতিকেজি শিম পাইকারী বিক্রি হয় ২৫-৩০ টাকা। প্রতি পিস লাউ ৩০-৪০টাকা। কুমড়া গড়ে প্রতি পিস ৪০-৫০টাকা। এছাড়াও অনেকে কুমড়া, কদু ও মাশকালাই শাক বিক্রি করেন। শীত মৌসুমে নদীতে মাছ কম পাওয়া যায়। সবজির বিক্রির টাকা কিছুটা হলে আমাদের চরাঞ্চলের লোকদের আয় রোজগার বাড়ে।

স্থানীয় ওমর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সফিউল্লাহ সরকার বলেন, আমি দীর্ঘদিন চরাঞ্চলে আসা-যাওয়ায় দেখেছি, এখানকার মানুষ খুবই কর্মঠ। বছর জুড়ে কোন কোন কাজে জড়িত থাকেন। তবে এখানকার প্রতিটি বাড়ীতে প্রচুর পরিমানে সবজি উৎপাদন হয়। জৈব সার ব্যবহার করায় বিষমুক্ত সবজির চাহিদা শহরে অনেক বেশী।

রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হযরত আলী বেপারী বলেন, চরাঞ্চল নদীর কারণে বিছিন্ন হওয়ার কারণে এখানকার বাসিন্দারা কৃষি কাজে তেমন কোন প্রশিক্ষণ পাওয়ার সুযোগ হয় না। তারপরেও পূর্ব পুরুষদের দেখাদেখি তারাও কৃষিকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এখন কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বাড়িতে সবজি এবং জমিতে একাধিক উচ্চ ফলনশীল ফসল উৎপাদনের জন্য চেষ্টা অব্যাহত আছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন